Saturday, May 28, 2016

আরবী ভাষা শেখার পথে কয়েকটি ব্যাপার মাথায় রাখা উচিত

আরবী ভাষা শেখার পথে কয়েকটি ব্যাপার মাথায় রাখা উচিত,
১। প্রথমেই নিজের ইচ্ছাকে যাচাই করতে হবে যে কেবল চাওয়ার জন্য চাওয়া নাকি সত্যিই শিখতে চান। কারন সত্যিকার ইচ্ছার সাথে পরিশ্রম করার প্রস্তুতি থাকে।
২। আপনি আরবী দেখে পড়তে পারেন কি না। অর্থাৎ তাজয়ীদের নিয়ম সহ কুরআন পড়তে পারেন কি না। না পারলে দয়া করে এখনই ভাষা শিক্ষা নয়।
৩। লেগে থাকার ধৈর্য্য আবশ্যক। গণিত যেমন ক্লাসে না বুঝলে বা পরীক্ষায় ফেল করলেও ছেড়ে দেন না তেমন আরবীও কঠিন মনে হলে বা না পারলেও ছেড়ে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে বন্ধুর থেকে, ভাইদের থেকে বুঝে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।
৪। এটাকে কোন সেকেন্ডারী কাজ মনে করা যাবে না। এটা রুটিনের অন্তর্ভুক্ত বিষয় মনে করতে হবে। সময় পেলে পড়বো না পেলে থাক- এই মানসিকতা নিয়ে হবে না।
৫। ক্লাসে যাওয়া আর আসার মাঝে অন্তত একবার করে দেখতে হবে উস্তায কি বুঝিয়েছেন। না বুঝলে নোট করে রাখতে হবে যাতে সেটা পরবর্তী ক্লাসে জেনে নেওয়া যায়।
৬। নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিতি আবশ্যক। যেহেতু এর প্রায় প্রতিটা ক্লাসেই নতুন কিছু থাকে তাই ক্লাস মিস করা যাবে না।
৭। অনেকে কেবল বুঝে বুঝে রেখে দেয় মনে রাখার মত মুখস্ত করে না। এদের ঐ বুঝ আসলে কোন কাজে আসে না। সুতরাং তথ্য মুখস্ত রাখতে হবে।
৮। অনেকে পড়তে পারে কিন্তু লিখতে পারে না কারন তারা লেখার চর্চা করে না ফলত বানানগুলো উচ্চারন জানলেও লেখা সম্ভব হয়না। সুতরাং লিখে লিখে পড়তে হবে।
৯। আল্লাহর কাছে সততার সহিত দোয়া করতে হবে। সততা বলতে দোয়ার সাথে পরিশ্রম থাকতে হবে। পরিশ্রম ছাড়া দোয়া অনেকটা প্রতারণা।
আল্লাহ কবুল করুক। আল্লাহ আমাদের দ্বীনের পথে চলা সহজ করুক। আমীন।

#কুরআনীয় আরবী শিক্ষা

Tuesday, May 17, 2016

ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহিঃ) কি ছিলেন আর কি ছিলেন না

বাংলাদেশের ইসলামি জাগরণের কথা ইদানিং খুব বলি। বলি, ইসলামের কোন ভয় নেই বাংলাদেশে। বলি, ইসলাম কে কেও মিটায়ে দিতে পারবেনা ঐ ভূখন্ড থেকে। বলি, বাংলাদেশ থেকে ইসলাম মুছে ফেলার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর একটা জাগৃতি বন্যার বেগে ধেয়ে আসছেই।
যখন এই সব কথা প্রগলভতার সাথে বলি, যে মুখটা এসে আমার সামনে এক ফালি চাঁদের হাসি বিকীর্ণ করে, 'সালাম ভাই, ক্যামন আছেন' বলে আশা যোগায় তিনি হলেন ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাংগির। তাকে দেখে আমি এত কঠিন কথা বলতে সাহস পেতাম।
১৯৮৯ সাল থেকে পরিচয়। তখন তিনি রিয়াদের ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাঊদ বিশ্ববিদ্যালয়ের এর মাস্টার্স এর ছাত্র। 'মাশারিকুল আনওয়ার' নামক এক হাদীস গ্রন্থের উপর তিনি ভাষাতাত্বিক স্টাডী করছেন। জিজ্ঞাসু নয়নে তাকিয়ে বোকা বোকা ভাষায় বল্লাম, হাদীসের কেতাব, স্টাডী হচ্ছে ভাষাতাত্বিক?! তিনি হেসে বললেনঃ 'সালাম ভাই, এই যায়গায় তো উম্মাতের সমস্যা। আজকের মুহাদ্দিস রা ভাষা জানেনা, আর ভাষাবিদ রা হাদীস জানেনা'। চোখ খুলে গেল। ইবনে মালিকের দর্শন তিনি বুঝালেন। হাদীস কে কিভাবে যে ইগনোর করা হচ্ছে তা বুঝালেন। আমি আপ্লুত হলাম, চোখে মদীনার সবুজ গম্বুজের হাতছানি খেলতে লাগলো।
দেখা হয়েছে বহু বার, বহু যায়গায়, বহু ক্ষেত্রে কিংবা বহু আনন্দে বিপদে। একবার রিয়াদে বাংলাদেশী দায়ী ইলাল্লাহ গণের মাঝে মারাত্মক এক ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। ডঃ তরিক, মাওলানা সাঈদ মিসবাহ, মাওলানা আব্দুর রাক্বীব সহ বেশ কয়েকজন আলিমের মাঝে একটু দুরত্ব তৈরি হয়। জাহাংগির ভাই তখন ছাত্র, কাজ করেন বাংলাদেশ এম্বেসীতে, এবং দাওয়াতি এক সংস্থার সাথে। সেদিন মিমাংসার ক্ষেত্রে তার অবদান ছিলো এমন যে তার প্রতিটা কথা সবাই মেনে নেন, এবং সকলের মন শান্তিতে ভরে ওঠে। আমি উনাকে বললামঃ ভাইজান, হামযাতুল ওয়াসল এর মত কাজ করলেন, আগের ও পরের শব্দের সাথে নিজকে বিলিয়ে কিভাবে মিলিয়ে দিলেন। উনি আবারো উপহার দিলেন একফালি হাসি।
১৯৯১ সালে মদীনায় যাচ্ছি কিং সাঊদ বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে। তিনি খুশী হয়েছিলেন। কিং সাঊদের ইসলামিক স্টাডীজ তার পছন্দ ছিলোনা। তিনি তখন পিএইচ ডি থিসিস শুরু করেছেন। বিদেশিদের মাঝে ইসলামের দাওয়াত ছড়াতেন। ইংরেজিতে তিনি খুব ভালো ছিলেন বলে আমেরিকান সেনা ছাওনিতে তিনি ইসলাম পৌঁছানোর কাজ করতেন। জিজ্ঞাসা করলামঃ ভাই, কয় জন ইসলাম কবুল করেছেন? তিনি বললেনঃ বলা নিষেধ, তবে আপনাকে একটা কথা বলি, ওদের মাঝে ইসলাম পৌঁছাতে পারলে তারা উন্মুখ হয়ে আছে। ঐ বছরেই শুনেছিলাম ডঃ জগলুল নাজ্জার ও জাহাংগির ভাইদের দাওয়াতে তিন শতাধিক সৈন্য মুসলিম হয়ে যায়। এবং সরকারি হস্তক্ষেপে এই দাওয়াতি কাজ বন্ধ রাখা হয়।
১৯৯৫ সালে মদীনা থেকে রিয়াদে বেড়াতে আসি। শায়খ আব্দুর রহমান মাদানী আর আমি। উদ্দেশ্য এম এ করার জন্য একটা স্কলারশিপের ব্যবস্থা করা। তিনি দাওয়াত দিলেন। ভাবী কে দেশে পাঠায়েছেন। শ্যালক আছেন বাসায়। বাসায় যেয়ে দেখলাম সব খালি। মানে উনার পি এইচ ডি শেষ, তিনি দেশে ফিরবেন। সার্টিফিকেট নিয়ে ও শ্যালকের পরীক্ষা শেষ করিয়ে ফিরবেন। তিনি আমাদের জামিয়াতুল ইমামে নিয়ে গেলেন। শিক্ষক গণের সাথে পরিচয় করালেন। দেখলাম তার শিক্ষকগণ শুধু ভালোবাসেন না তাকে, সম্মান ও করেন ঢের।
ঈমানের সাথে ইলম, ইলমের সাথে আমল এবং আমলের সাথে এত হিলম আমি আর কারো মাঝে পাইনি। তিনি সবার সাথে মিশতে পারার এক দূর্লভ গুণ অর্জন করে ছিলেন। তবে সহীহ হাদীসের এক চুল দূরে যেতে ছিলো তার প্রচন্ড আপত্তি।
"ভাই, জামাআতে ইসলামির সাথে বা তাব্লীগের সাথে, বা কোন অর্গানাইজেশনের সাথে থেকে কাজ করলে কি বেশি ভালো হত না"? আমার এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেনঃ "সালাম ভাই, বাংলাদেশে ৯০% মুসলিম, এদের মাঝে দল করা মানে এদের কে বিভক্ত করে ফেলা। বাংলাদেশের সব মুসলমানের সাথেই আমি থাকি, সে ভালো"। আমি বললামঃ "কিন্তু কেও তো আপনাকে মেনে নেবে না, তাছাড়া, কারো না কারো সাথে থাকলে একটু সাহায্য পাবেন"। তিনি বললেনঃ " সবাই মেনে নেবে সালাম ভাই। কারণ কলেমার দাওয়াত এমন যে, ঐটা ব্যাবহার করে দেখেন না একজন ভিক্ষুক ও সব মুসলমানদের দয়া ও সাহায্য পায়। আমি না হয় "ঐক্যের ভিক্ষুক" হই। কলেমা নিয়ে সবার কাছে যাই, তাড়ায়ে দিলেও মারতে পারবেনা কেও। চোখ খুলে দিলেন আমাকে।
জাহাংগির ভাই, বড় অবেলায় চলে গেলেন, বিদ্যুতের যে আলোকচ্ছটা আপনি ছড়িয়ে ছিলেন তা বিকশিত না হতেই এই হতভাগা জাতিকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন। আমি আপনার জন্য কী আর দেব। দুচোখের নহরে ভাসা জীর্ণ মলিন মুখ দেখুন, আর রোগাক্রান্ত হৃদয়ের দীর্ণ করা হাহাকার টাই শুনুন............ আল্লাহুম্মা নাক্কিহি মিনায যুনূব কামা য়্যুনাক্ক্বা আসসাওবুল আবয়াদু মিনাদ্দানাস। ও আল্লাহ, তুমি তাকে জান্নাতুল ফিরদাওসের মেহমান বানাও। শাহাদাতের মর্যাদা দাও।

#M Abdus Salam Azadi

Thursday, May 12, 2016

ড: আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যার আর নেই

ড: আবদুল্লাহ জাহাঙ্গির স্যার আর নেই(11/05/2016)। মুহুর্তের মধ্যে যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। শোকে পাথর হয়ে গেছি। এ যাবৎ কোন প্রিয়জনের বিয়োগে এতো কষ্ট অনুভব হয়নি যতখানি হয়েছে এই প্রিয় ব্যক্তিত্বের বিদায়ের খবর শুনে।
জীবনে বহু মানুষ দেখেছি। অনেক বড় আলিমগণের সান্নিধ্যধন্য হয়েছি। কিন্তু আল্লাহর কসম, একটুও বাড়িয়ে বলছি না, ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গির রাহিমাহুল্লাহ এর মতো বিনয়ী, উদার, সুন্দর মন, উম্মাহর জন্য দরদী, মুখলিস, পরমত সম্মানকারী, যুগসচেতন, স্নেহ পরায়ন, উম্মাহর ঐক্য ভাবনায় বিভোর, প্রাজ্ঞ ও পণ্ডিত আমি দ্বিতীয়জন দেখিনি।
একাধিকবার বলেছি স্যার, আমাকে শায়েখ না বলে আহমাদুল্লাহ আর আপনি না বলে তুমি করে বললে বেশি সুন্দর মানায় এবং আমি বিব্রত হওয়া থেকে রক্ষা পাই। আমি তো আপনার ছেলে উসামার সময়বয়সী। তখন তিনি বললেন- ভাই, আমরা আলেমদের সম্মান না দেখালে সাধারণ মানুষ কিভাবে তাঁদের মর্যাতা বুঝবে, সম্মান দেখাবে?
প্রতিবার দেশে গেলে তাঁর সাথে সাক্ষাত করতে যেতাম ঝিনাইদহের আসসুন্নাহ ট্রাস্টে। জীবনের প্রথম টিভি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলাম তাঁর সাথে। নবীন ও ছোটদের ভুলগুলো কিভাবে পরম আদরে শুধরে দিতে হয় তার জ্বলন্ত উদাহরণ ছিলেন এই মহামানব। নিজের পরম শত্রু এবং বিদ্বেষীর সাথেও আকৃত্রিম হাসি ও আন্তরিকতা দেখানোর মতো সুন্দর চরিত্র আমি কেবল তাঁর মধ্যেই দেখেছি।
এ জাতি কতো বড় একজন মানুষকে হারিয়েছে তা হয়তো উপলব্ধি করতেও অনেক সময় পার হয়ে যাবে। তিনি একমাত্র বাংলাদেশী যিনি সৌদি আরবের রিয়াদের বিশ্ববিখ্যাত আল ইমাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রেকর্ড সংখ্যক নাম্বার নিয়ে শিক্ষা জীবনের প্রতিটি ধাপ শেষ করেছেন। এখান থেকেই তিনি অনার্স, মাস্টার্স ও ডক্টরেট করেছেন। বর্তমান সৌদি বাদশা সালমানের হাতে দুই দুই বার সেরা ছাত্রের পুরস্কার নিয়েছেন। সৌদি আরবের বর্তমান স্কলারদের অনেকেই তাঁর সহপাঠী।
চতূর্দিকে যখন ভারসাম্যপূর্ণ লোকের দুর্ভিক্ষ চলছে, ঠিক এমন একটি সময়ে তাঁর মতো বিচক্ষণ ও উদার লোকের বড় বেশি প্রয়োজন ছিল!
হে রাব্ব, নিজের বাবাকে হারালে যেমন শোকে পাথর হয়ে যেতাম, তারচে মোটেও কম দুখ: পাইনি আমার দেখা এই শ্রেষ্ঠ মানুষটির বিদায়ে। আপনি তাঁকে আপন মাগফিতার ও রহমতের ছায়তলে ঢেকে নিন। তাঁর বিকল্প এই উম্মাহকে দান করুন। তাঁর ভালো গুনগুলো দিয়ে যেন নিজেকে সাজাতে পারি, আমাদের সেই তাউফীক দান করুন।

 #শায়খ আহমাদউল্লাহ
 

Facebook fan page